১. মস্তিষ্কের ১০ শতাংশই আমরা ব্যবহার করে থাকি :
আপনি জেনে অবাক হবেন যে মস্তিষ্কে ঘটে
যাওয়া ঘটনাটি খুব কমই হুবহু পুনরাবৃত্তি করতে পারে। নাটকীয়ভাবে বুদ্ধিমত্তা
বাড়ানো, আধ্যাত্মিক ক্ষমতা এমনকি কোনো কিছু চালানোর অন্তর্শক্তির মত
বিষয়গুলো মস্তিষ্কই দিয়ে থাকে। আমরা যদি চাই তবে সব ধরনের কাজই আমরা করতে
পারি শুধুমাত্র মস্তিষ্কের ১০ অংশ ব্যবহার করে। তাহলে শুধু ভাবুন যে
মস্তিষ্কের বাঁকি ৯০ শতাংশ ব্যবহার করলে আমরা আরও কতকিছু করতে পারি।
গবেষকরা বলেছেন যে মস্তিষ্কের সব অংশগুলোই কিছু ভিন্ন ভিন্ন কার্য সম্পাদন
করে থাকে। যদি এই ১০ শতাংশের বিষয়টি সত্যি হয় তাহলে হয়ত ভাবছেন যে এই অংশে
আঘাতে তেমন কোনো ক্ষতির সম্ভাবনাই নাই কেননা বাঁকি ৯০ তো আছেই। কিন্তু কঠিন
হলেও সত্যি কথা হল এক অংশে আঘাত পেলে এটি সব অংশেই তার নেতিবাচক ফলাফল
ফেলতে থাকে। মস্তিষ্কের ১০ অংশ ব্যবহৃত হলেও এর কার্যক্ষমতা দেখায় ১০০
শতাংশতেই। এটি ঘুমের মধ্যেও কার্যকর থাকে। গবেষকরা বলেন, মস্তিষ্কের ওজন
একটি বালকের ওজনের শতকরা ৩ শতাংশ হয়ে থাকে কিন্তু এটি ব্যবহৃত হয় বালকের
অ্যানার্জীর মোট ২০ শতাংশ।
২. মস্কিষ্ক স্থায়ীভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ হয় :
মানব মস্তিষ্ক বিভিন্ন আঘাত, স্ট্রোক বা
অসুস্থতার কারণে ভঙ্গুর বা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। এই ধরনের ক্ষতি
মস্তিষ্কে স্থায়ীভাবেই দেখা দেয়। আমরা এই ধরনের ক্ষতি নিয়ে চিন্তা করে থাকি
ঠিকই কিন্তু আঘাতের স্থান অনুযায়ী একজন মানুষ চাইলেই এই ক্ষতি থেকে নিজেকে
পুনরুদ্ধার করতে পারেন না। মনে রাখা দরকার যে মানব মস্তিষ্ক এক ধরনের
চিত্তাকর্ষক নমনীয় পদার্থ দ্বারা তৈরি। স্ট্রোকে আক্রান্ত একজন মানুষ মাঝে
মাঝে তার ইচ্ছায় সুস্থ হয়ে ওঠেন ঠিকই কিন্তু ভেতরের আঘাতটা স্থায়ীভাবেই
থেকে যায়। গবেষকরা বলেন এমন অসুখে মানুষ মেডিক্যাল থেরাপির মাধ্যমে কিছু
নতুন সংযোগ তৈরি করে ভালো হয়ে যান।
৩. ডান মস্তিষ্ক, বাম মস্তিষ্ক :
এমন কথা হয়ত খুব কমই শুনে থাকবেন যে মানুষ
তার মস্তিষ্কের ডানগোলার্ধ বা বাম গোলার্ধ থেকে পরিচালিত হয়ে থাকে। এই
তথ্য অনুযায়ী যারা নাকি ডান গোলার্ধ থেকে পরিচালিত হন তারা অনেক বেশি
সৃজনশীল এবং কর্মদক্ষতাপূর্ণ হয়ে থাকেন এবং যারা বাম গোলার্ধ দ্বারা
পরিচালিত হয়ে থাকেন তারা বিশ্লেষক মনোভাবাপন্ন ও যুক্তিসঙ্গত হয়ে থাকেন।
কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে কেউই পুরোপুরি ডান মস্তিষ্কসম্পন্ন এবং বাম
মস্তিষ্কসম্পন্ন হয়ে থাকেন না। বরং আমরা তখনই একটা ভালো কাজ করে থাকি যখন
আমরা আমাদের সম্পূর্ণ মস্তিষ্ককেই কাজে লাগাই। দুটো গোলার্ধই যখন আমরা কাজে
লাগাই তখন মনোযোগটা পুরোপুরি আসে। তবে বাম গোলার্ধ কোনো শব্দ শোনার কাঝে
বেশি ব্যবৃত হয়ে থাকে এবং ডান গোলার্ধ কোনো আবেগঘন বৈশিষ্ট্যে বেশি
কার্যকরী হয়ে থাকে।
৪. মানব মস্তিষ্ক সবচেয়ে বড় :
মানবদেহের অনুপাতে মানব মস্তিষ্ক বেশ বড়
হয়ে থাকে। কিন্তু একটা ভুল ধারণা রয়েছে যে মানব মস্তিষ্ক অন্যান্য সকল
জীবের চেয়ে অনেক বেশি বড় হয়ে থাকে। মানব মস্তিষ্ক মূলত ওজনে ৩ পাউন্ড এবং
পরিমাপে ১৫ সেন্টিমিটার প্রস্থ হয়ে থাকে। সবচেয়ে বড় মস্তিষ্কসম্পন্ন প্রাণী
হল তিমি মাছ যার মস্তিষ্কের ওজন ১৮ পাউন্ডের মত। এছাড়া হাতির মস্তিষ্কও
অনেক বড় হয়ে থাকে সর্বোপরি ১১ পাউন্ড। তবে দেহের সাথে তুলনা করলে মানুষেরই
সবচেয়ে বড় মস্তিষ্ক।
৫. মৃত্যুর সাথে সাথে মস্তিষ্কের কোষও মারা যায় :
প্রাপ্ত বয়স্কদের মস্তিষ্কে কোষের পরিমাণ
অনেক বেশি থাকে। তবে এর পরে আর নতুন কোনো কোষ তৈরি হয় না। এ ধরনের প্রচালত
কথা থাকলেও গবেষণায় গবেষকরা বলেছেন যে যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিনই মস্তিষ্কে
নতুন কোষ তৈরি হবে, এমনকি আপনি যদি বুড়োও হয়ে যান তারপরও নতুন কোষ তৈরি
হবে। নতুন কোষ জন্মানোকে নিওরোজেনেসিস বলে থাকে। যতদিন পর্যন্ত মানুষ বেঁচে
থাকেন ঠিক ততদিন পর্যন্তই এই মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে। মারা যাওয়ার কয়েক
সেকেন্ডে এটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
৬. অ্যালকোহল খেলে মস্তিষ্কের কোষ মারা যায় :
অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণে মানবদেহ উষ্ণ
হয়ে গেলে মস্তিষ্কের এমন কিছু মূল্যবান কোষ মারা যায় যা আর কখনই ফিরে আসে
না এমন কথা প্রচলিত আছে। তবে এটা সত্য যে অতিরিক্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী
অ্যালকোহল গ্রহণে দেহের মারাত্মক ক্ষতি করে কিন্তু এর ফলে যে নিউরনগুলো
মারা যায় এমন কথাতে বিশেষজ্ঞরা একেবারেই বিশ্বাসী নন। গবেষণায় দেখা গেছে
এটি কোনোভাবেই নিউরনকে মেরে ফেলে না। গবেষকরা বলেন, নির্দিষ্ট পরিমাণ
অ্যালকোহল মস্তিষ্কের চিন্তা শক্তিকে বাড়িয়ে দেয়, কিন্তু অতিরিক্ত সেবনে তা
নষ্ট করেও দেয়। সহনীয় মাত্রা মস্তিষ্কের কোষকে মেরে ফেলে না বরং
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। বুড়ো বয়সের এটি মস্তিষ্কের
কর্মক্ষমতাকে বাড়াতে সাহায্য করে।
৭. মানব মস্তিষ্কে ১০০ বিলিয়ন নিউরন রয়েছে :
আপনার কাছে যদি মনোবিদ্যা এবং
¯œায়ুবিজ্ঞানের কোনো বই থেকে থাকে তাহলে আপনি খুব সহজেই জানতে পারবেন যে
মানব মস্তিষ্কে ১০০ বিলিয়ন নিউরন রয়েছে। তবে এই নিউরনগুলো ঠিক কোথায় সংসঠিত
এই বিষয়ে কেউই নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারবেন না। ২০০৯ সালে এক গবেষক একজন
তরুণের মস্তিষ্কের নিউরনগুলো আলাদা করেন এবং এগুলোর সংখ্যা দিয়ে চিহ্নিত
করার চেষ্টা করেন। এই গবেষণা থেকে দেখা যায় মানব মস্তিষ্কে ৮৫ বিলিয়নের
কাছাকাছি নিউরন রয়েছে।
No comments:
Post a Comment