‘‘বনলতা সেন’’
__জীবনানন্দ দাশ
হাজার বছর ধরে আমি পথ
হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল-সমুদ্র থেকে নিশীথের
অন্ধকারে মালয়-সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার-
অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরও দূর
অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক,
চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দু-দন্ড শান্তি দিয়েছিল
নাটোরেরবনলতা সেন ।
চুল তার কবেকার অন্ধকার
বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য;
অতিদূর সমুদ্রের পর
হাল ভেঙ্গে যে নাবিক
হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন
সে চোখে দেখে দারুচিনি-
দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে;
বলেছে সে, 'এতদিন কোথায়
ছিলেন?'
পাখির নীড়ের মত চোখ
তুলে নাটোরের বনলতা সেন।
সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের
শব্দের মত
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের
গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ
নিভে গেলে পান্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির
রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে - সব নদী -
ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার,
মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।
No comments:
Post a Comment